সাবমিট
ধর্মীয় উগ্রবাদ সাংস্কৃতিক স্থিতিশীলতার জন্য গভীর হুমকি
ধর্মীয় উগ্রবাদ বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্থিতিশীলতার জন্য গভীর হুমকি। গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে আজ পর্যন্ত মাজারে হামলা, ভাস্কর্য ভাঙ্গা, বাউলদের উপর হামলা, সংগীত বন্ধ করা, নারী ফুটবল খেলা নিষেধ করা ও সব ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আক্রমণ, ভাঙচুর ও সামাজিক উত্তেজনা সৃষ্টি করে আসছে তৌহিদী জনতা নামে একটি গোষ্ঠী। অথচ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মূল চেতনা ছিল- তথাকথতি স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসান, সমাজ ও রাষ্ট্রের বৈষম্য নিরসন, ভোটাধিকারের মাধ্যমে গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি, ঘুষ, চাঁদা, হত্যা-খুন-ধর্ষণ মুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামো তৈরি করা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান অভিযোগ করেন, সরকারের নিষ্ক্রিয়তা চরমপন্থার বিকাশের সুযোগ দিয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, ভবিষ্যতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হলে দায় বর্তাবে বর্তমান সরকারের ওপর। সত্যিকার তৌহিদী জনতা সহিংসতার পক্ষ নেয় না; তাই যারা হামলা চালাচ্ছে, তারা ধর্মের অপব্যবহারকারী রাজনৈতিক শক্তি। বাউল আবুল সরকারের জামিন শুনানির দিন আদালতপাড়ায় সমর্থকদের ওপর হামলাকে তিনি ‘পরিকল্পিত প্রদর্শনী’ হিসেবে বর্ণনা করেন। পুকুরে ফেলা, পিটিয়ে জখম করা ও সহিংস শ্লোগান প্রদর্শনের মাধ্যমে এই গোষ্ঠী তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও চরিত্র প্রকাশ করছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে উগ্রবাদী শক্তি ও ধর্মীয় উন্মাদনার উদ্ভব নতুন বিষয় নয়। স্বাধীনতার পর থেকে সমাজ নানা সময়েই রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উন্মাদনার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে।
২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম দাবি তোলে যে, তৌহিদী জনতার ওপর নির্যাতন বন্ধ করা হোক। এরপর তাদের কর্মকান্ড ধর্ম, সামাজিক নিয়মকানুন এবং রাজনৈতিক প্রভাব একত্রিত হয়ে নতুন অস্থিতিশীলতা তৈরি করেছে।
তৌহিদী জনতা কেবল ধর্মীয় আন্দোলন নয়, বরং সামাজিক নিয়ন্ত্রণ এবং রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারকেই লক্ষ্য করে। ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে কাবা শরীফের বিকৃত ছবি ফেসবুকে শেয়ারকারীর শাস্তির দাবিতে পদযাত্রা এবং পুলিশের উপর হামলা এ বিষয় প্রমাণ করেছে।
একই বছর ডিসেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে থেমিসের সাদৃশ্যযুক্ত ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে উগ্রধর্মীয় দলগুলো। ২০১৭ সালের মে মাসে ভাস্কর্য অপসারণ করা হয়, যা প্রমাণ করে যে উগ্রধর্মীয় আন্দোলন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নীতিকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়।
২০ অক্টোবর ২০১৯ সালে ভোলার বোরহানউদ্দিনে স্থানীয় এক হিন্দু যুবকের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ও পুলিশের ওপর হামলা হয়। সংঘর্ষে চারজন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়।
২০২০ সালে ঢাকার ধোলাইরপাড় চত্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে তারা। ২০২১ সালে কুমিল্লার পূজামন্ডপে কুরআন পাওয়ার ঘটনা ছড়িয়ে সহিংসতা ছড়ায়। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে হিন্দু মন্দিরে পাথর নিক্ষেপ; পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে, ৪ নিহত ও ৫০ আহত হয়। একই ঘটনায় বান্দরবানের লামায় হিন্দু মন্দির ও বাজারে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট সংগঠিত হয়।
২০২৪ সালে চট্টগ্রামের স্টেশন সড়কের শোরুম উদ্বোধনে বাধা, সিলেটের শাহ সুফি আবদুল কাইউম চিশতিয়ার মাজারে হামলা, ময়মনসিংহ দেওয়ানবাগ পীরের দরবারে হামলা, শেরপুর, শরীয়তপুরসহ সারাদেশে শত শত মাজারে হামলার ঘটনা ঘটে। ভারত সমর্থনের অভিযোগে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে। মহতি সাধুসঙ্গ ও লালন মেলা বন্ধ; নারায়ণগঞ্জে সুফি সাধক শাহ্ সোলায়মান লেংটার উরস ও মেলা বাধাগ্রস্ত করে।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে সিলেটে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করে। ২৮ জানুয়ারি জয়পুরহাট ও দিনাজপুরে নারী ফুটবল ও ক্রীড়া কার্যক্রমে বাধা দেয়, সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বাড়ি ভেঙে ফেলায় তারা সক্রিয় নেতৃত্ব দেয়। ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, কুষ্টিয়া, নাটোর ও পিরোজপুরসহ বিভিন্ন শহরে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা, আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে; এক্ষেত্রে তাদেরকে দেখা যায়। এই সহিংসতা প্রসঙ্গে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছিলেন, ‘সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বাড়ি, চিহ্ন, প্রতীক ভেঙে রাগ দেখানো যায়, কিন্তু ফ্যাসিবাদ যায় না, বরং ফ্যাসিবাদের পুনরুৎপাদন হয়।’
২০২৫ এর ২০ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীর শাহ সুফি আইয়ুব আলী দরবেশের মাজারে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে তৌহিদী জনতা বিক্ষোভ মিছিল করে। ২৮ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় ওরস আয়োজন ভাঙচুর ও আগুন দেয়া হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের ভালোবাসা দিবস উদযাপনে ভাঙচুর করে, যে কারণে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর বসন্তবরণ স্থগিত করা হয়। ৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তার অভিযুক্তের মুক্তির দাবিতে তৌহিদী জনতার চাপ প্রয়োগ এবং মুক্তির পরে মালা দিয়ে বরণ।
মাজার ভাঙার ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জের দেওয়ানবাগ মাজারে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, সোনারগাঁর আয়নাল শাহ দরগা ভাঙা, সিলেটের শাহপরাণ মাজারে গান-বাজনা বাতিল ঘোষণা করে।
ঝালকাঠির রাজাপুরে ১৫ জুলাই ২০২৫ মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ভেঙে কোরআনের ভাস্কর্য স্থাপন; এলাকায় ‘কোরআন চত্বর’ ঘোষণা করে। ঢাকায় ‘মঞ্চ ৭১’ আয়োজিত ‘মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বাংলাদেশের সংবিধান’ আলোচনায় হামলার শিকারদের আটক করে পুলিশ; আর হামলাকারীরা বীরদর্পে মুক্ত থাকে।
এইসব কারণে বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস, ঘুড়ি উৎসব, মেলার সব অনুষ্ঠান বাতিল বা স্থগিত করেছে উদ্যোক্তরা। হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং সাংস্কৃতিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক অনুষ্ঠান বন্ধ করা নাগরিক অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য সরাসরি হুমকি।
তৌহিদী জনতার সহিংসতা নারীর শিক্ষা, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, উৎসব ও ইতিহাস-বিষয়ক আলোচনার সব ক্ষেত্রেই ভয় ও চাপ বাড়াচ্ছে। শিশু, কিশোর ও তরুণ প্রজন্মের সামাজিক বিকাশ ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য এটি ক্ষতিকর।
দায়িত্বশীল সরকারের মৌলিক কর্তব্য হলো নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং উগ্রবাদ প্রতিরোধ করা। পুলিশি পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়; রাজনৈতিক স্থিরতা, আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ, শিক্ষা ব্যবস্থায় সহনশীলতার চর্চা, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুল তথ্য প্রতিরোধ এবং ধর্মীয় সংলাপের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্যোগ জরুরি।
বাংলাদেশের বহুজাতিক, বহুধর্মীয় সামাজিক কাঠামো রক্ষার জন্য সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা, হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি, নারীর অধিকার ও শিশুর নিরাপত্তা সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে। মব ভায়োলেন্স, উগ্রবাদী আচরণ ও ইতিহাস বিকৃতির প্রবণতা প্রতিহত করতে রাষ্ট্রকে আইনগত, প্রশাসনিক ও সামাজিকভাবে সক্রিয় হতে হবে। গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ ও স্থানীয় নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি রাষ্ট্রপতি হতে পারেন, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান উপদেষ্টা, সেনাপ্রধান কিংবা সচিব- তাতে কিছু আসে যায় না, আপনার ভিতরে যদি দায়িত্ববোধ, মানবিকতা, নৈতিকতা ও মনুষ্যত্ব না থাকে এবং আপনার সিদ্ধান্তের ফলে যদি জনগণের জানমাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে সেই দায় আপনার। আপনি শিক্ষক, সাংবাদিক, শিল্পী কিংবা দার্শনিক- আপনার সামাজিক অবস্থান বা পরিচয় যতই উঁচু হোক না কেন, যদি মনুষ্যত্ববোধ ও ন্যায়বোধ না থাকে, তবে আপনি সমাজের জন্য কোনো কাজের না।
দেশে পূর্বের তুলনায় বর্তমানে খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, দুর্নীতি ও সহিংসতার মাত্রা বেড়েছে। গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে একটি ‘মব-সংস্কৃতি’ গড়ে উঠেছে, যা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, মাজারে হামলা, বিরোধী মত ও গণতান্ত্রিক কণ্ঠস্বর দমনে সহিংসতাকে উৎসাহিত করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শ্রমিক, শিক্ষক ও ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন দমনেও সহিংসতা ব্যবহার করা হয়েছে। কিশোর গ্যাং একের পর এক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অদক্ষতা ও সরকারের দুর্বল নেতৃত্বে অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়া, কালোবাজারি ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য সাধারণ মানুষকে আরও বিপন্ন করে তুলছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতির দিকে। এসব ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা জনগণের ভেতরে গভীর হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে।
সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, নারীর প্রতি অবমাননাকর দৃষ্টিভঙ্গি, লিঙ্গ বৈষম্য এবং ঘৃণার রাজনীতি সমাজে বিকৃত মানসিকতার অপরাধী তৈরি করে। মানসিক স্বাস্থ্যের অবহেলা অপরাধ প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। অপরাধকে ‘ট্রেন্ড’ হিসেবে দেখা এবং অসৎ জীবনযাপনের প্রতি সামাজিক সহানুভূতি একটি বিপজ্জনক সংস্কৃতি তৈরি করছে।
ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছয় মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখায়নি। মাজারে হামলা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, হত্যা, খুন এবং ধর্ষণের মতো অপরাধের ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এসব ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অদক্ষতা এবং সরকারের দুর্বল নেতৃত্বই মূল কারণ, যার ফলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
আগস্ট ২০২৪-এর পর এই ধরনের প্রবণতার বৃদ্ধির পেছনে রাজনৈতিক ও সামাজিক তিনটি প্রেক্ষাপট গুরুত্বপূর্ণ: ক্ষমতার শূন্যতা ও প্রশাসনিক দুর্বলতা, ধর্মভিত্তিক দলগুলোর পুনঃসক্রিয়তা, এবং সোশ্যাল মিডিয়া-ভিত্তিক প্রচারণা ও উসকানি।
হামলায় জড়িতরা স্থানীয় ইসলামপন্থি গোষ্ঠী, কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনের সদস্য, ধর্মভিত্তিক ছাত্র ও যুব সংগঠন, রাজনৈতিক ইসলামি দলের স্থানীয় ইউনিট এবং কিছু মসজিদভিত্তিক উপগোষ্ঠী। ‘মব ম্যানেজার’ হিসেবে পরিচিত কিছু ব্যক্তি সোশ্যাল মিডিয়া ও মসজিদের মাধ্যমে জনতাকে সংগঠিত করে। তাদের উদ্দেশ্য ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণ, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার ও সমাজে আতঙ্ক সৃষ্টি।
নিয়ন্ত্রণ ব্যর্থতার কারণ: প্রশাসনিক নির্দেশনার অস্পষ্টতা, গোয়েন্দা নজরদারির অভাব, দুর্বল গ্রেপ্তার ও আইনি প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক নরম অবস্থান, সামাজিক প্রতিক্রিয়ার অবমূল্যায়ন।
যদি এই প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ না হয়, নারীর অধিকার ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের ওপর চাপ বাড়বে, সমাজে উগ্রতার প্রতি সহনশীলতা তৈরি হবে, স্থানীয় প্রশাসন দুর্বল হবে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা ও সক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে এবং আরো হবে। তৌহিদী জনতার কর্মকান্ড ও সহিংসতা, ভাঙচুর ও বিক্ষোভ দেশের স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে।
বর্তমানে দেশে অপরাধ দমনে তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনতে হবে। একইসাথে, সরকারের নেতৃত্বে রাজনৈতিক দল, স্থানীয় সম্প্রদায় ও গণমাধ্যমকে নিয়ে একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। গ্রাম, শহর ও পাড়া-মহল্লায় জনসচেতনতা বাড়ানো, অপরাধ প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা রাখা এবং গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য প্রয়োজন অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণ করা।
লেখক : গবেষক ও রাজনৈতিক কলাম লেখক
[email protected]
মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সিঙ্গাপুরে ১১ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার
সিঙ্গাপুরে মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ১২ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১১ বাংলাদেশি রয়েছেন ।শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) দ্য স্ট্রেইট টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুরের উডল্যান্ডস এলাকার একটি ডরমিটরিতে পরিচালিত অভিযানে মাদক সম্পর্কিত বিভিন্ন অভিযোগে ১২ অভিবাসী শ্রমিককে গ্রেপ্তার করেছে সেন্ট্রাল নারকোটিকস ব্যুরো (সিএনবি)। গ্রেপ্তারদের মধ্যে ১১ বাংলাদেশি এবং একজন মিয়ানমার নাগরিক।
সিএনবি জানিয়েছে, তাদের মধ্যে ৩৪ বছর বয়সী এক বাংলাদেশিকে মাদক পাচার ও মাদক সেবনের সন্দেহে আটক করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি সংস্থা যৌথভাবে চার ঘণ্টার এ অভিযানে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে সিএনবি, হেলথ সায়েন্সেস অথরিটি, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড চেকপয়েন্টস অথরিটি, মিনিস্ট্রি অব ম্যানপাওয়ার এবং পুলিশ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সংস্থাটির সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অভিযান শুরু করা হয়। অভিযানে একটি রুমে চার অভিবাসী শ্রমিককে হাতকড়া পরিয়ে বসিয়ে রাখতে দেখা যায়। এ সময় কর্মকর্তারা তাদের ব্যাগ, পোশাক, লাগেজ তল্লাশি করেন। পরে পঞ্চম ব্যক্তিকে একই রুমে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এরপর আরেক রুমে কর্মকর্তারা আরেক শ্রমিককে আটক করেন এবং গ্লাস বোতল, কাট স্ট্র, রাবার টিউবসহ সন্দেহজনক মাদক সরঞ্জাম উদ্ধার করেন। অভিযানে তাদের মূল্যবান সামগ্রী স্বচ্ছ ব্যাগে ভরে জব্দ করা হয়। ডরমিটরির অন্য শ্রমিকরা দরজা ও করিডোর থেকে উদ্বেগ নিয়ে ঘটনাটি দেখতে থাকেন। পরে রাত ১টা ২০ মিনিটের দিকে গ্রেপ্তার ১২ জনকে তদন্তের জন্য গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়।
সিএনবির এনফোর্সমেন্ট জে ডিভিশনের ডেপুটি কমান্ডিং অফিসার সুপারিনটেনডেন্ট জ্যান্থাস টং হিয়েং জি বলেন, মাদক সিঙ্গাপুরের কোনো সম্প্রদায়, কর্মক্ষেত্র বা ডরমিটরিতে স্থান পাবে না। আমরা কঠোর অবস্থান বজায় রাখব।
সংস্থাটির বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪ সালে মোট তিন হাজার ১১৯ জন মাদক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর ২০২৩ সালে ৩ হাজার ১২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে এ প্রতিবেদনে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জাতীয়তা উল্লেখ করা হয়নি।
১০ বছর লাগবে খেলাপি ঋণ সংকট কাটিয়ে উঠতে : গভর্নর
দীর্ঘদিনের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার ফলে তৈরি হওয়া খেলাপি ঋণের সংকট কাটিয়ে উঠতে অন্তত ৫ থেকে ১০ বছর সময় লাগবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
শনিবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত চতুর্থ ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলন-২০২৫’ এর উদ্বোধনী অধিবেশনে এ কথা বলেন তিনি।
গভর্নর বলেন, খেলাপি ঋণ ছোটোখাটো কোনো সমস্যা নয়। দেশে ব্যাংক খাতের মোট ঋণের এক-তৃতীয়াংশের বেশি এখন খেলাপি ঋণ। বাকি দুই-তৃতীয়াংশের ওপর নির্ভর করে ব্যাংক চালাতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতি পুরো আর্থিক খাতকে চাপের মুখে ফেলে দিয়েছে।
খেলাপি ঋণ বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতি প্রান্তিকে যখন নতুন তথ্য আসে, নতুন ক্লাসিফিকেশন নিয়ম কার্যকর হয়, তখনই দেখা যাচ্ছে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। আজ থেকে দুই বছর আগে ধারণা ছিল ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার ২৫ শতাংশের মতো হতে পারে। তখনকার সরকার বলেছিল তা ৮ শতাংশ। এখন দেখা যাচ্ছে এটি ইতোমধ্যে ৩৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
খেলাপি ঋণের এই পরিস্থিতি রাতারাতি সমাধান সম্ভব নয় উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতকে আরও বহুদিন এই সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। ধাপে ধাপে এগোতে হবে। পুরোপুরি উত্তরণে অন্তত ৫ থেকে ১০ বছর সময় লাগতে পারে।
এ সময় আহসান এইচ মনসুর বলেন, তবে আমদানির ঋণপত্র খোলার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডলার রয়েছে। চলতি বছর রমজানে ঋণপত্র খোলা ও পণ্য আমদানি নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। ইতোমধ্যে গত বছরের এ সময়ের তুলনায় ২০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি ঋণপত্র খোলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
একীভূত হওয়া ৫ ব্যাংকের কার্যক্রম প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ইসলামী ধারার ৫ ব্যাংক নিয়ে গঠিত সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হবে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বিএনপি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে সবসময় দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে ভূমিকা রেখেছে। ওপেন ইকোনমি যুগের সূচনা করেছেন জিয়াউর রহমান। ক্ষমতায় এসে বিএনপি প্রতিবারই অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে কাজ করেছে।
বিএনপি অর্থনীতি ধ্বংস করেছে, এ কথা কেউ বলতে পারেনি দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করা দরকার। তাদের বিশ্বাস করতে হবে। লুটপাটে যারা জড়িত তাদের শাস্তি দেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে কেনো বেকারত্ব তৈরি করছি? এগুলো ভাবতে হবে। শুধু অর্থনৈতিক পথরেখা নয়, রাজনৈতিক পথরেখাও তৈরি করতে হবে। সংস্কারের যেসব বিষয়ে বিএনপি সই করেছে, তার বহু আগেই দলটি এসব প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল। এ সময় বিএনপি শুধু ‘নতুন বাংলাদেশ’ নয়, বরং একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চায়। যেখানে গণতন্ত্র ও অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে বলেও মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল।
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে সরকারের কোনো বিধিনিষেধ নেই : প্রেস সচিব
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো ধরনের বিধিনিষেধ নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। শনিবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে এ তথ্য জানান তিনি।
প্রেস সচিব ফেসবুকে লিখেন, ‘জনাব তারেক রহমানের আজকের বক্তব্য যে এখনই দেশে ফেরার বিষয় সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ তার জন্য অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়, এটা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জনাব শফিকুল আলমের কাছে জানতে চাওয়া হয় যে তার বাংলাদেশ প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে কোন ধরনের বিধি নিষেধ রয়েছে কিনা।’
প্রেস সচিব জানান, ‘এ ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে কোনো বিধিনিষেধ অথবা কোন ধরনের আপত্তি নাই। তিনি আরও উল্লেখ করেন, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস ইতিমধ্যে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং তার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।’
এর আগে হাসপাতালের সিসিইউতে ‘অত্যন্ত সংকটাপন্ন’ অবস্থায় চিকিৎসাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র চেয়ারপারসান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সংকটময় মুহূর্তে মায়ের পাশে না থাকতে পারার কারণ জানিয়ে তার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ফেসুবকে লিখেছেন, সংকটকালে মায়ের স্নেহ স্পর্শ পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা যেকোনো সন্তানের মতো আমারও রয়েছে। কিন্তু অন্য আর সবার মতো এটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমার একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।
তারেক রহমান লিখেন, স্পর্শকাতর এই বিষয়টি বিস্তারিত বর্ণনার অবকাশও সীমিত। রাজনৈতিক বাস্তবতার এই পরিস্থিতি প্রত্যাশিত পর্যায়ে উপনীত হওয়া মাত্রই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে আমার সুদীর্ঘ উদ্বিগ্ন প্রতিক্ষার অবসান ঘটবে বলেই আমাদের পরিবার আশাবাদী।
মায়ের বর্তমান শারীরিক অবস্থা জানিয়ে তিনি লিখেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ ও সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যায় রয়েছেন। তার রোগমুক্তির জন্য দল-মত নির্বিশেষে দেশের সব স্তরের নাগরিক আন্তরিকভাবে দোয়া অব্যহত রেখেছেন। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা তার রোগমুক্তির জন্য দোয়ার সাথে সাথে চিকিৎসার সর্বত সহায়তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। দেশ বিদেশের চিকিৎসক দল বরাবরের মত তাদের উচ্চমানের পেশাদারিত্ব ছাড়াও সর্বোচ্চ আন্তরিকত সেবা প্রদান অব্যহত রেখেছেন। বন্ধুপ্রতীম একাধিক রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও উন্নত চিকিৎসাসহ সম্ভাব্য সব প্রকার সহযোগিতার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করা হয়েছে।
বেগম খালেদা জিয়া আগামীর বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্য : রাশেদ খান
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করেছেন। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়ার দীর্ঘায়ু বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) রাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ প্রার্থনা জানান।
ফেসবুক পোস্টে রাশেদ খান বলেন, ‘মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করছি।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘বিগত ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের’ অমানবিক আচরণ ও নিষ্ঠুরতার কারণেই খালেদা জিয়ার এমন শারীরিক অবস্থা তৈরি হয়েছে।’
তিনি বলেন, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পরিপূর্ণ সুস্থতা কামনা করছি। বেগম খালেদা জিয়া আগামীর বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্য, গণতন্ত্রের জন্য আপোষহীন, সংগ্রামের জন্য অনুকরণীয় এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত।’
রাশেদ খান বলেন, ‘খালেদা জিয়ার দীর্ঘায়ু বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় / আওয়ামী লীগের সাধারণ ভোটারদের ভোট দিতে বিধি-নিষেধ নেই
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ১৯৯১ সালে দলটি ক্ষমতায় গেলে হয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রী। আগামী সংসদ নির্বাচন, বর্তমান রাজনীতি, অন্য দলের সঙ্গে জোট গঠন এবং দলের মনোনয়ন না পাওয়াদের ক্ষোভ নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শিহাবুল ইসলাম।
প্রশ্ন : জুলাই সনদ, এনসিপির স্বাক্ষর না করা, জামায়াতের আন্দোলন, শেখ হাসিনার মামলার রায়—সবকিছু মিলিয়ে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আপনি কী ভাবছেন?
উত্তর : সব মিলিয়ে দেশের রাজনৈতিক যে অবস্থা বা নির্বাচন, এটি আশা ও আশঙ্কার মাঝামাঝি।
আশাও আছে আবার আশঙ্কাও আছে। সরকার যদি সিদ্ধান্তে অটল থাকে তাহলে নির্বাচন সম্ভব। আর সরকারকে নিরপেক্ষভাবে সহায়তা করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। নির্বাচনের বিধি, আরপিও আছে নির্বাচন কমিশনের।
সেটি তাদের অনুসরণ করতে হবে। আর যাঁরা ভোটার আছেন তাঁদের মধ্যে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহটা সৃষ্টি করতে হবে। ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে যে উদ্যমটা তৈরি হয়েছিল, সংস্কার নিয়ে সাত মাস বৈঠক করতে করতে মনে হয়েছে, তাদের সেই উদ্যমে ভাটা পড়েছে। তাদের মধ্যে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে, নির্বাচন হবে তো? এই প্রশ্নটা দূর করতে যাঁরা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাঁদের কাজ করতে হবে। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে। যদি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া যায় তবে আশঙ্কা কেটে যাবে।
প্রশ্ন : আসন্ন নির্বাচনে কোনো ধরনের মেকানিজম হওয়ার আশঙ্কা করছেন কি?
উত্তর : অন্তত ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ভোটারকে যদি ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত করা যায়, তাহলে ভোট গ্রহণের দায়িত্বে যাঁরা থাকবেন তাঁরা ইচ্ছা করলেও আর নয়ছয় করতে পারবেন না। কারণ তখন ভোটাররা সুষ্ঠু ভোট হতে বাধ্য করবেন। এ ক্ষেত্রে আর মেকানিজম করার সুযোগ থাকবে না।
আর যদি মেকানিজম হয় তাহলে অতীত সরকার যা করেছে তা-ই হবে। তাহলে আগের নির্বাচন কমিশনার আর এই নির্বাচন কমিশনের মধ্যে চারিত্রিক কোনো তফাৎ মানুষ খুঁজে পাবে না।
প্রশ্ন : প্রশাসনে রদবদলে নিরপেক্ষতার বিষয়ে আপনারা সরকারকে চিঠি দিয়েছিলেন। আসন্ন নির্বাচন পরিচালনা ও ফলাফল ঘোষণায় যাঁরা থাকবেন সঠিকভাবে ফলাফল ঘোষণার ক্ষেত্রে তাঁদের ভিন্ন কোনো আচরণ দেখা যেতে পারে কি?
উত্তর : ভোট দেবে ভোটার। রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার ভোট দেবেন না। ধরে নিলাম আসন্ন নির্বাচনের দায়িত্বে সব জামায়াত, আওয়ামী লীগ। কিন্তু তাঁরা তো ভোট গ্রহণ করবেন। হাজার হাজার ভোট তো বন্ধ করতে পারবেন না। এখানে ভোটাররাই ভোটের নিরাপত্তা দেবেন। ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত ভোটাররাই কেন্দ্রের সবচেয়ে বড় পাহারাদার।
প্রশ্ন : দীর্ঘ সময় পর একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা করছে দেশের মানুষ। এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ কি গণতান্ত্রিক ধারায় প্রবেশ করতে পারবে?
উত্তর : গণতান্ত্রিক পথে প্রবেশের, রাস্তায় ওঠার একটাই পথ—অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আমরা যদি তা করতে ব্যর্থ হই তাহলে পারব না। গণতন্ত্রের পথে প্রবেশের একটাই পথ—সেটা হলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।
প্রশ্ন : আসন্ন নির্বাচনে দেশের বড় একটি দল অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তাদের অনুপস্থিতিতে সাধারণ মানুষের কাছে কী ধরনের বার্তা যাবে?
উত্তর : বার্তাটা এখন আর নতুন করে দেওয়ার কিছু নেই। ৫ আগস্টের পরেই বার্তাটা চলে গেছে। ভোট দিতে তো কারো বাধা নেই। আমরা তো সবার ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্যই আন্দোলন করছি। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগের যাঁরা ভোট দিতে অভ্যস্ত, তাঁরা কেন্দ্রে যাবেন না এটা তো শতভাগ গ্যারান্টি দেওয়া যাবে না। স্থানীয় ইকুয়েশনে তাঁরা কারো না কারো পক্ষে ভোট দিতে যাবেন। এখানে আওয়ামী লীগের সাধারণ ভোটারদের ভোট দিতে তো বিধি-নিষেধ নেই।
প্রশ্ন : গাইবান্ধা, রংপুর অঞ্চলে তিস্তা বাঁচাও কর্মসূচি, পদ্মা বাঁচাও কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। এর মাধ্যমে বিএনপি আসলে কী অর্জন করতে চাচ্ছে? এটা কি ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলবে?
উত্তর : জনগণের দুর্দশা লাঘবে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল মাঠে থাকবে, এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই। এটা দায়িত্ব। এটাকে জনগণ কিভাবে নেবে, সেটা জনগণের দায়িত্ব। কিন্তু সভা-সমাবেশ করলেই সবাই ভোট দিয়ে দেবে, এ জন্য তো করা হচ্ছে না। এটা জনগণের প্রতি দায়িত্বের জায়গা থেকে করা। সবকিছুকে ভোটে জড়ানো ঠিক নয়।
প্রশ্ন : সাত-আট মাস ধরে জামায়াত আপনাদের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় কথা বলছে। এর বিপরীতে বিএনপির পক্ষ থেকে শান্তভাবে উত্তর দেওয়া হচ্ছে। এর কারণটা কী?
উত্তর : এর কারণ একটাই, দুর্বলরা চিৎকার করে বেশি। আর সবলরা কথা কম বলে।
প্রশ্ন : নির্বাচনে জোট নিয়ে আলাপ হচ্ছে। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট হচ্ছে না, এটা নিশ্চিত। এনসিপির সঙ্গে বিএনপির জোট হওয়া নিয়ে একটা আলোচনা হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। এর সত্যতা কতটুকু?
উত্তর : সংবাদমাধ্যমে অনেক খবরই আছে। এ ব্যাপারে আমি কোনো বক্তব্য দেব না। এনসিপিকে জিজ্ঞেস করলে তারাও একই কথা বলবে। যেই জিনিসটায় আড়াল আছে, ওই জিনিসটা আড়ালেই থাকুক। যখন আলোতে আসবে, তুমিও জানবে আমিও জানব।
প্রশ্ন : বেশ কিছু আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের পরিবর্তন করার দাবি জানানো হচ্ছে। কিছু জায়গায় বিক্ষোভ হচ্ছে, রিভিউ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কি ঘোষিত কোনো প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে?
উত্তর : যাঁরা মনোনয়ন পাননি তাঁরা যে অযোগ্য, এমন তো নয়। দেখা যায় সমান-সমান, কেউ কারো চেয়ে কম নন। তার পরও তো একজনকে বেছে নিতে হয়। আর যাঁরা দল করেন তাঁদেরও ভাবতে হবে দলীয় স্বার্থ, তারপর গণতন্ত্রের স্বার্থ, তারপর দেশের স্বার্থ।
প্রশ্ন : এই ক্ষোভ নিরসনের উপায় কী?
উত্তর : এটা বেশিক্ষণ থাকবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত নমিনেশন চূড়ান্ত না হবে নির্বাচন কমিশনে, ওই পর্যন্তই টুকিটাকি এসব বিবাদ-প্রতিবাদ থাকবে।
প্রশ্ন : এ ক্ষেত্রে রিভিউ গ্রহণের সুযোগ আছে কি?
উত্তর : রিভিউ হতেও পারে। কিন্তু হতেই হবে এমন নয়। আমাদের কাছে তথ্য আছে কোথায় কোথায় বিক্ষোভ হচ্ছে। এটা আমরা খতিয়ে দেখব সঠিক না বেঠিক। রিভিউ হবে কি না, এটা যেমন আমি বলতে পারব না, আবার হবে না, সেটাও বলতে পারব না। দুইটাই হতে পারে।
সূত্র : কালের কণ্ঠ
এ দেশের মানুষ আশাভঙ্গের বেদনায় নীরবে কাঁদে
দারিদ্র্য কমানোর ক্ষেত্রে উল্টো পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংক বলছে, দেশে চার বছর ধরে দারিদ্র্যের হার বাড়ছে। সংস্থাটির অনুমিত হিসাব, ২০২৫ সালে দারিদ্র্যের হার হতে পারে ২১ শতাংশের কিছু বেশি। দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখে।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর এক হোটেলে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে বিশ্বব্যাংক ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)।
দেশে দারিদ্র্যের হার হিসাব করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সংস্থাটির খানা আয়ব্যয় জরিপে এ তথ্য উঠে আসে।
সর্বশেষ খানা আয়ব্যয় জরিপ করা হয়েছিল ২০২২ সালে। তখন সার্বিক দারিদ্র্যের হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের এ প্রতিবেদন বলে দিচ্ছে দেশের অর্থনীতি ভালো নেই, ভালো নেই দেশের মানুষ। সরকার এবং দেশের রাজনৈতিক দলগুলো যখন নির্বাচন নিয়ে রশি টানাটানিতে ব্যস্ত, তখন সাধারণ মানুষ অর্থনৈতিক সংকট ও নিরাপত্তাহীনতায় হাঁসফাঁস করছে।
জিনিসপত্রের দাম জনগণের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে ক্রমাগত। গত দেড় বছরে অর্থনীতিতে একমাত্র রেমিট্যান্স ছাড়া কোনো সুখবর নেই। হাজার হাজার কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন বিনিয়োগ নেই। বেকারত্ব বাড়ছে প্রতিদিন।
চাঁদাবাজি, মবসন্ত্রাসের কারণে আতঙ্কিত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বড় শিল্পোদ্যোক্তারা পর্যন্ত। সব ধরনের ব্যবসায়ীরা রীতিমতো হাত-পা গুটিয়ে বসে আছেন। বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা বলছেন, ব্যবসাবাণিজ্যের ন্যূনতম পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি গত দেড় বছরে। অর্থনৈতিক উপদেষ্টা নিজেই বলেছেন, নির্বাচিত সরকার এলে বিনিয়োগ এবং ব্যবসার পরিবেশ স্বাভাবিক হবে। একই রকম মনোভাব পোষণ করেছে আইএমএফও। নির্বাচিত সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের অপেক্ষায় আইএমএফ ঋণের অর্থ ছাড় স্থগিত রেখেছে। ব্যাংকিং খাতে চলছে অস্থিরতা। খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে।
সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চলছে। রাজস্ব আয়ে দুর্বলতা এবং উচ্চাকাক্সক্ষী উন্নয়ন ব্যয়ের কারণে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সরকারের মোট ঋণ ২১ ট্রিলিয়ন টাকা বা ২১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত অর্থ বিভাগের ঋণ বুলেটিনে বলা হয়েছে, জুনের শেষে এই পরিমাণ ২১ দশমিক ৪৪ ট্রিলিয়ন টাকায় পৌঁছায়, যা এক বছর আগের ১৮ দশমিক ৮৯ ট্রিলিয়ন টাকার চেয়ে প্রায় ১৪ শতাংশ বেশি। বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৯ দশমিক ৪৯ ট্রিলিয়ন টাকা, যা মোট ঋণের ৪৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। পাঁচ বছর ধরে বৈদেশিক ঋণ ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে। ২০২১ সালে এর পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ২০ ট্রিলিয়ন টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ৩৭ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ ঋণও বেড়েছে, যা গত অর্থবছরের ১০ দশমিক ৭৬ ট্রিলিয়ন টাকা থেকে প্রায় ১১ শতাংশ বেড়ে ১১ দশমিক ৯৫ ট্রিলিয়ন টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০২১ সালে অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ দশমিক ২২ ট্রিলিয়ন টাকা। পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, বৈদেশিক ঋণ অভ্যন্তরীণ ঋণের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। ফলে বেসরকারি ব্যবসা, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ সংকোচন নীতি গ্রহণ করেছে ব্যাংকগুলো।
নানামুখী চাপে, চলমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় অনেক ভালো উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীও ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবছেন। অর্থনৈতিক সংকট ও বেসরকারি খাতের এ করুণ দশার প্রভাব ফেলেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। মানুষের আয় কমেছে, ব্যয় বেড়েছে। প্রতিদিনের জীবন নির্বাহ করতে এখন মানুষ হাঁসফাঁস করছে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে আছে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। দেশের সাধারণ মানুষের আর্থিক দৈন্যের শেষ নেই। বেসামাল বাজার পরিস্থিতি সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ফেলে দিয়েছে চরম সংকটে। আয় বাড়েনি, বেড়েছে ব্যয়। ফলে সংসারের খরচ মেটাতে গিয়ে সঞ্চয় ভাঙতে হচ্ছে। অনেকে আবার করছেন ধারদেনা। শুধু নিত্যপণ্যের দাম নয়, বেড়েছে পরিবহন খরচ, চিকিৎসা ব্যয়, এমনকি শিশুর শিক্ষা। সবখানেই খরচ বাড়ছে হুহু করে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) গবেষণায় উঠে এসেছে, তিন বছরের ব্যবধানে শহরের পরিবারের মাসিক আয় কমলেও বেড়েছে খরচ। শহরের একটি পরিবারের গড়ে মাসিক আয় ৪০ হাজার ৫৭৮ টাকা। খরচ হয় ৪৪ হাজার ৯৬১ টাকা। ২০২২ সালে এ আয় ছিল ৪৫ হাজার ৫৭৮ টাকা। তিন বছরের ব্যবধানে আয় কমেছে ৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে গ্রামের পরিবারের গড় আয় কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ২০৫ টাকা। তাদের মাসিক খরচ ২৭ হাজার ১৬২ টাকা। ২০২২ সালে গ্রামের একটি পরিবারের গড় আয় ছিল ২৬ হাজার ১৬৩ টাকা। তিন বছরের ব্যবধানে গ্রামের মানুষের বেড়েছে ৩ হাজার ৪২ টাকা। তবে সার্বিক ও জাতীয়ভাবে একটি পরিবারের মাসে গড় আয় ৩২ হাজার ৬৮৫ টাকা। খরচ হয় ৩২ হাজার ৬১৫ টাকা। সঞ্চয় নেই বললেই চলে।
পিপিআরসির জরিপে আরও দেখা যায়, একটি পরিবারের মাসিক মোট খরচের প্রায় ৫৫ শতাংশ চলে যায় খাবার কেনায়। সে ক্ষেত্রে পরিবার খাবার কিনতে মাসে গড়ে ১০ হাজার ৬১৪ টাকা খরচ করে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপের তথ্যানুযায়ী, একটি পরিবারকে শুধু খাবারের পেছনে মাসে ব্যয় করতে হচ্ছে ৩১ হাজার ৫০০ টাকা, যা ২০১৬ সালে ছিল ১৫ হাজার ৭১৫ টাকা। ২০১০ সালে ১১ হাজার ২০০ টাকা।
অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি মানুষের জীবন আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে। সারা দেশে খুন, জখম ও রাহাজানি বেড়েই চলেছে। দেশের মানুষ আজ জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। নদীতে ফেলে দেওয়া লাশের পাশাপাশি জাতীয় ঈদগাহের পাশে ২৬ টুকরো লাশের সন্ধান মিলছে। রাজশাহীতে দায়রা জজ আদালতের বিচারকের বাসায় ঢুকে তাঁর ছেলেকে হত্যা এবং স্ত্রীকে জখম করা হয়েছে। প্রতিদিন খবরের কাগজে এ রকম হত্যাকাণ্ডের খবর আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলছে।
চাঁদাবাজি আর মবসন্ত্রাসে জিম্মি গোটা দেশ। হত্যা মামলার আসামি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সন্ত্রাসীরা টেলিফোনে হুমকি দিচ্ছে ব্যবসায়ীদের। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক সহিংসতা। ককটেল বিস্ফোরণ, বাসে আগুনের ঘটনা ঘটছে নতুন করে। নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘাত ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারেনি। পুলিশের পোশাক পাল্টানো হলেও তাদের মনোবল বাড়ানোর দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেই। শোচনীয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির চেয়ে সরকারের মনোযোগ নানান সংস্কারে। কিন্তু জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে এসব সংস্কার কোনো কাজে আসবে না। মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সংস্কার নিয়ে জনগণ এখন রীতিমতো বিরক্ত।
শনিবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নয় দিনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে নামবে। এর মধ্যে নির্বাচনের আগে পাঁচ দিন, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচনের পরে তিন দিন কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা বলবৎ থাকবে। তবে দেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী এ সময়সীমা সমন্বয় করা হবে। শনিবার দুপুরে পটুয়াখালী সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন। কিন্তু এখন যদি সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে জনগণ ভোট কেন্দ্রে যাবে কীভাবে? এ প্রশ্নের জবাব নেই কারও কাছেই। এ নিয়ে সরকারের উদ্বেগও লক্ষ করা যায় না।
এ দেশের মানুষের চাহিদা খুবই সামান্য। সাধারণ মানুষ তিন বেলা পেট ভরে খেতে চায়। কাজ শেষে নিরাপদে ঘরে ফিরতে চায়। রাতে শান্তিতে ঘুমাতে চায়। মানুষ চায় তাদের সন্তানদের শিক্ষা, অসুস্থ হলে সঠিক চিকিৎসা। একটু সঞ্চয়, হয়রানি ছাড়া নাগরিক অধিকার লাভ। কিন্তু এ দেশের মানুষের দুর্ভাগ্য, এই সামান্য চাওয়াগুলো কোনো সরকার আন্তরিকভাবে পূরণের চেষ্টা করে না। একটু নিরাপদ জীবনের জন্য, সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য এ দেশের মানুষ বারবার আশায় বুক বাঁধে। এতটুকু শান্তির জন্য রাজপথে নামে, রক্ত দিয়ে অধিকার আদায় করতে চায়। কিন্তু প্রতিবার এ দেশের মানুষ হয় প্রতারিত। আশাভঙ্গের বেদনায় নীরবে কাঁদে। আমরা কি সেই কান্না শুনতে পাই?
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন
ইউটিউবের নতুন ফিচার
ইউটিউবে নিজের পছন্দের ভিডিও খুঁজে পেতে অনেক ব্যবহারকারীকেই প্রায়ই হিমশিম খেতে হয়। অ্যালগরিদম–নির্ভর রেকমেন্ডেশন বেশি সময়েই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। আর তার ফলেই হোম ফিড ভরে ওঠে অনাকাঙ্ক্ষিত কনটেন্টে। এই দীর্ঘদিনের অভিযোগ এবার গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে ইউটিউব। শুরু করেছে নতুন একটি পরীক্ষামূলক ফিচার ‘ইউর কাস্টম ফিড’।
এই ফিচার ব্যবহারকারীদের নিজেদের ফিড নিজেদের মতো করে সাজানোর সুযোগ দেবে। ইউটিউব বলছে, বহু ব্যবহারকারী জানিয়েছেন যে প্ল্যাটফর্ম মাঝে মাঝে তাদের দেখার ধরন ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে। যেমন- কয়েকটি শিশুতোষ বা ডিজনি ঘরানার ভিডিও দেখলেই ধরে নেওয়া হয় ব্যবহারকারী নিয়মিত এই ধরনের কনটেন্ট দেখতে চান। এরপর পুরো হোম ফিড সেই ভিডিওতে ভরে যায়। যা অনেক সময়ই বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
নতুন ‘কাস্টম ফিড’ এই সমস্যারই সমাধান দিতে পারে। যাদের জন্য ফিচারটি চালু করা হয়েছে তারা হোমপেজে ‘হোম’ বাটনের পাশেই একটি নতুন অপশন দেখতে পাবেন “Your Custom Feed”। সেখানে ক্লিক করলেই ব্যবহারকারীর সামনে আসবে একটি বক্স। যেখানে তারা নিজেদের আগ্রহ অনুযায়ী নির্দিষ্ট নির্দেশ বা ‘প্রম্পট’ দিতে পারবেন। যেমন- রান্না, ভ্রমণ, প্রযুক্তি বা বই নিয়ে ভিডিও দেখতে চাইলে সরাসরি সেই বিষয়ের নাম টাইপ করলেই হবে। এরপর ইউটিউব সেই আগ্রহকে অগ্রাধিকার দিয়ে ভবিষ্যতের ফিড সাজিয়ে দেবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ফিচার জনপ্রিয় হলে ইউটিউব ব্যবহার করার অভিজ্ঞতায় বড় পরিবর্তন আসতে পারে। এত দিন অনাকাঙ্ক্ষিত ভিডিও এড়াতে ব্যবহারকারীদের আলাদাভাবে “আগ্রহ নেই” বা “চ্যানেল সুপারিশ করবে না” -এ রকম অপশন ব্যবহার করতে হতো। নতুন ফিচারের মাধ্যমে একই কাজ আরও সহজ এবং সরাসরি করা সম্ভব হবে।
ইউটিউবের এই উদ্যোগের পাশাপাশি অন্যান্য প্ল্যাটফর্মও পারসোনাল ফিডের দিকে ঝুঁকছে। মেটার থ্রেডস সম্প্রতি অ্যালগরিদম নিয়ন্ত্রণের পরীক্ষামূলক ফিচার চালাচ্ছে। আর এক্স (আগের টুইটার) কাজ করছে এমন এক ব্যবস্থায়। যেখানে ব্যবহারকারী তাদের এআই চ্যাটবট ‘গ্রোক’-কে ট্যাগ করলেই ফিড বদলে যাবে।
বর্তমানে ‘ইউর কাস্টম ফিড’ সীমিত সংখ্যক ব্যবহারকারীর জন্য চালু করা হয়েছে। পরীক্ষায় ইতিবাচক ফল মিললে এটি সব ব্যবহারকারীর জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইউটিউবের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে ব্যবহারকারীদের সুবিধা বাড়াতে এবং অ্যালগরিদমের সমালোচনা কাটাতে এই ফিচার বড় ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ডায়াবেটিস রোগীর কাঁধে ব্যথার কারণ ও প্রতিকার
বয়স ৪০ পার হলে হাড়ের ক্ষয় শুরু হয়। এ সময় অস্থিসন্ধির (জয়েন্ট) অভ্যন্তরীণ সাইনোভিয়াল ফ্লুইড কমে যেতে থাকে। এ কারণে যেকোনো অস্থিসন্ধির সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস থাকলে কাঁধের সন্ধিতে ব্যথা দেখা দেয় বেশি।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অন্যদের তুলনায় বেশি কাঁধের ব্যথায় ভোগেন। এর কারণ, অ্যাডহেসিভ ক্যাপসুলাইটিস বা ফ্রোজেন শোল্ডার। ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে এটি বেশি হয়।
এর ফলে ব্যথার পাশাপাশি কাঁধের সংযোগস্থল শক্ত হয়ে পড়ে। পর্যায়ক্রমে রোগী হাত ওপরে ওঠাতে পারেন না, পিঠের দিকে নিতে পারেন না, পোশাকও পরতে পারেন না। এমনকি চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াতেও কষ্ট হয়।
কারণ কী
আগেই বলা হয়েছে, রক্তে অনিয়ন্ত্রিত শর্করা ফ্রোজেন শোল্ডারের অন্যতম কারণ। এ ছাড়া হাত দিয়ে ভারী কিছু ওঠাতে গিয়ে আগে কখনো ব্যথা পেয়েছিলেন, কিন্তু গুরুত্ব দেননি; তা থেকেও ব্যথা হতে পারে। এ ছাড়া স্ট্রোকের (মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ) পরও এমন সমস্যা হতে পারে।
সার্ভিক্যাল স্পন্ডিলোসিস রোগে ঘাড় ও বাহুর ব্যথার কারণে রোগী হাতের নড়াচড়া কমিয়ে দেন। এতে ক্রমেই কাঁধের সংযোগস্থল শক্ত হয়ে যেতে পারে। চালক হঠাৎ কষে ব্রেক করলে গাড়ির যাত্রীরা নিজেদের রক্ষার জন্য হাতল বা কোনো কিছু শক্ত করে ধরে ফেলেন বা ধরার চেষ্টা করেন। এতে অনেকে ব্যথা পেয়ে থাকেন, যা পরে কাঁধব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রতিকার কী
কাঁধে খুব ব্যথা না হলে ব্যথানাশক ওষুধ পরিহার করা ভালো। তবে মাংসপেশি স্বাভাবিক (রিলাক্স) করতে মাসল রিলাক্সেন্ট–জাতীয় ওষুধের প্রয়োজন পড়ে। পাশাপাশি প্রয়োজন সঠিক ও সময়োপযোগী ফিজিওথেরাপি। এ রোগের চিকিৎসায় কিছু ইলেকট্রো থেরাপিউটিক এজেন্ট খুব উপকারী।
রোগীকে প্রতিদিন কিছু ব্যায়াম করতে হয়। অবশ্যই রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ফ্রোজেন শোল্ডার ধীরে ধীরে সারে। পুরো সারতে কয়েক মাস, এমনকি বছরও লেগে যেতে পারে। ধৈর্য ধরে ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম চালিয়ে যেতে হবে।
এম ইয়াছিন আলী, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল
হাসপাতালে খালেদা জিয়া / দেশে ফেরা প্রসঙ্গে যে বার্তা দিলেন তারেক রহমান
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সংকটময় বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসক। খালেদা জিয়া বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসাধীন। মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকের মাধ্যমে সিসিইউতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসনকে।
তার গুরুতর অসুস্থতার সর্বশেষ অবস্থা জানিয়ে দেশে ফেরার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শনিবার (২৯ নভেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ ও সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যায় রয়েছেন। তার রোগমুক্তির জন্য দল-মত নির্বিশেষে দেশের সব স্তরের নাগরিক আন্তরিকভাবে দোয়া অব্যাহত রেখেছেন। প্রধান উপদেষ্টা তার রোগমুক্তির জন্য দোয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসার সর্বত সহায়তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।
তিনি আরও বলেন, দেশ বিদেশের চিকিৎসকদল বরাবরের মতো তাদের উচ্চমানের পেশাদারিত্ব ছাড়াও সর্বোচ্চ আন্তরিকত সেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছেন। বন্ধুপ্রতিম একাধিক রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও উন্নত চিকিৎসাসহ সম্ভাব্য সকল প্রকার সহযোগিতার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করা হয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, সর্বজন শ্রদ্ধেয়া বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি সকলের আন্তরিক দোয়া ও ভালোবাসা প্রদর্শন করায় জিয়া পরিবারের পক্ষ থেকে সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। একই সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তির জন্য সকলের প্রতি দোয়া অব্যাহত রাখার জন্য ঐকান্তিক অনুরোধ জানাচ্ছি।
সবশেষ তিনি বলেন, এমন সংকটকালে মায়ের স্নেহ স্পর্শ পাবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা যে কোনো সন্তানের মতো আমারও রয়েছে। কিন্তু অন্য আর সকলের মতো এটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমার একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। স্পর্শকাতর এই বিষয়টি বিস্তারিত বর্ণনার অবকাশও সীমিত। রাজনৈতিক বাস্তবতার এই পরিস্থিতি প্রত্যাশিত পর্যায়ে উপনীত হওয়া মাত্রই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে আমার সুদীর্ঘ উদ্বিগ্ন প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে বলেই আমাদের পরিবার আশাবাদী।
যে ৪ কারণে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ হতে পারে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট
বার্তা বিনিময়ের পাশাপাশি অডিও ও ভিডিও কল করার সুযোগ থাকায় ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক কাজে অনেকেই নিয়মিত হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন। ফলে ব্যক্তিগত ও গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষিত থাকে অ্যাপটিতে। আর তাই ব্যবহারকারীদের অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধরনের সুরক্ষাব্যবস্থা চালু করেছে হোয়াটসঅ্যাপ। এসব সুরক্ষাব্যবস্থা ভঙ্গ করলে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ হতে পারে অ্যাকাউন্ট। অনেকেই মনে করেন, শুধু গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার শঙ্কা থাকে। তবে হোয়াটসঅ্যাপের তথ্যমতে, নীতিমালা ভঙ্গ করলে যেকোনো সময়ে অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা হতে পারে। যে চার কারণে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ হতে পারে, সেগুলো দেখে নেওয়া যাক।
১. অচেনা নম্বরে অনেক বেশি বা স্প্যাম বার্তা পাঠানো
একই বার্তা একাধিক অপরিচিত নম্বরে পাঠানো, অনুমতি ছাড়া গ্রুপে অবাঞ্ছিত ব্যক্তিদের যুক্ত করা বা বার্তা বারবার ফরওয়ার্ড করলে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ হতে পারে। বাণিজ্যিক প্রচারণা ও প্রতারণা ঠেকাতে এ ধরনের কার্যক্রম শনাক্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ।
২. হয়রানিমূলক বা ভুয়া পরিচয়ে বার্তা পাঠানো
পরিচিত বা অপরিচিত ব্যক্তিদের হয়রানিমূলক বা ভুয়া পরিচয়ে বার্তা পাঠালে অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করে থাকে হোয়াটসঅ্যাপ। তাই হোয়াটসঅ্যাপে অন্যদের বার্তা পাঠানোর সময় সতর্ক থাকতে হবে।
৩. সতর্কবার্তা পাওয়ার পরও নিয়ম না মানা
নিজেদের নীতিমালা মেনে না চললে অনেক সময় সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ব্যবহারকারীকে সতর্ক করে থাকে হোয়াটসঅ্যাপ। কিন্তু সতর্কতা সত্ত্বেও যদি কেউ একই কাজ করে বা কিছুদিন বিরতি দিয়ে আবার নিয়ম ভঙ্গ করে, তাহলে তাদের অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করে থাকে হোয়াটসঅ্যাপ।
৪. অননুমোদিত অ্যাপ ব্যবহার
জিবি হোয়াটসঅ্যাপ, ইয়ো হোয়াটসঅ্যাপ বা হোয়াটসঅ্যাপ প্লাসের মতো থার্ড পার্টির আন-অফিশিয়াল অ্যাপগুলোতে বাড়তি সুবিধা পাওয়া গেলেও সেগুলো হোয়াটসঅ্যাপ অনুমোদিত নয়। অ্যাপগুলো হোয়াটসঅ্যাপের নীতিমালাও অনুসরণ করে না। এ ধরনের অ্যাপ ব্যবহারের প্রমাণ মিললে হোয়াটসঅ্যাপ সরাসরি অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করে দেয়।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
ঢাকায় বাড়ছে শীত, ১৭ ডিগ্রিতে নামল তাপমাত্রা
ঢাকায় শীতের আমেজ আরও স্পষ্ট হচ্ছে। শনিবার (২৯ নভেম্বর) সকালে রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ দিনের প্রথমার্ধে আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টায় ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আকাশ আজ পরিষ্কার থাকবে এবং আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময় পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে হালকা বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। দিনের তাপমাত্রাও সামান্য কমতে পারে।
পূর্বাভাসে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ সকালে (সকাল ৬টায়) ঢাকার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৯ শতাংশ। আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সূর্যাস্ত হবে সন্ধ্যা ৫টা ১০ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় হবে ভোর ৬টা ২৪ মিনিটে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় কোনো বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়নি।
অন্যদিকে, গতকাল রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত সারা দেশের সম্ভাব্য পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অভিষেক আজ
ভারতের চেন্নাইয়ে গতকাল (শুক্রবার) থেকে শুরু হয়েছে অনূর্ধ্ব-২১ বিশ্বকাপ হকি। এদিন বাংলাদেশের খেলা ছিল না। আজ বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ দিয়ে তাদের বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু হবে।
সত্তর-আশির দশকে ফুটবলের পরই ছিল হকির জনপ্রিয়তা। সেই হকি এখন কালের বিবর্তনে অনেকটাই আলোচনার বাইরে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হকির অনেক সম্ভাবনা-সুযোগ থাকলেও নানা সংকটে আলোর মুখ দেখেনি। অ-২১ দল গত বছর ওমানে যুব এশিয়া কাপে ষষ্ঠ স্থান নিশ্চিত করায় বয়সভিত্তিক এই বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। আজ বিশ্বকাপে অভিষেক হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ হকির।
বাংলাদেশে এখন ফেডারেশন/অ্যাসোসিয়েশনের সংখ্যা ৫২। এর মধ্যে বিশ্বকাপে খেলতে পেরেছে মাত্র কয়েকটি খেলাই। আশির দশক থেকে দাবা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করছে। এরপর ক্রিকেট, ব্রিজ, ক্যারম, রোলবল, কাবাডি, আরচ্যারি ও শ্যুটিংয়ে বিশ্বকাপে খেলেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। সাঁতার ও অ্যাথলেটিক্সের মতো জনপ্রিয় ডিসিপ্লিনে বিশ্বকাপ নেই, তবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা নিয়মিতই অংশগ্রহণ করে।
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লে. কর্নেল রিয়াজুল হাসান (অব.) বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার। তিনি ভারত থেকে বলেন, ‘খেলোয়াড়রা আগামীকালের ম্যাচের জন্য প্রস্তুত। ছেলেরা খুব আশাবাদী, তাদের আত্মবিশ্বাসটা আছে।’ অস্ট্রেলিয়া হকির অন্যতম শক্তিশালী একটি দল। তাই তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের প্রত্যাশা মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা, ‘অস্ট্রেলিয়া বিশ্ব হকির একটা পাওয়ার হাউজ। প্রতিপক্ষের কৌশল নিয়ে ভিডিও অ্যানালাইসিস করা হয়েছে। আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ প্রত্যাশা করছি।’
আজ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। খেলার আগের দিনটি অন্য সব দিনের চেয়ে আলাদা। আজকের দিনে খেলোয়াড়দের রুটিন নিয়ে ম্যানেজার রিয়াজ বলেন, ‘আজ সকালে ছেলেরা বিচে ফিজিক্যাল ট্রেনিং করছে একটু। তারপর বিকেলে কোচ-খেলোয়াড়দের সঙ্গে মিটিং করেছেন প্রায় দুই ঘণ্টা। তারপর সবাই মাঠে খেলা দেখতে দেখলাম ওমান এবং সুইজারল্যান্ডের।’
বিশ্ববাজারে আরও বাড়ল সোনার দাম
বিশ্ববাজারে সোনার দাম দুই সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ আগামী মাসে নীতি সুদহার কমাতে পারে, এমন আশায় বিনিয়োগকারীরা সোনায় বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন। যে কারণে দাম বাড়ছে সোনার।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, স্পট মার্কেটে আজ শুক্রবার সোনার দাম শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ১৭৪ ডলার ১৫ সেন্টে উঠেছে। ১৪ নভেম্বরের পর এটাই সোনার সর্বোচ্চ দর। সাপ্তাহিক হিসাবে দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ।
বাজার বিশ্লেষক রস নরম্যান বলেন, ‘সোনার বাজারে মৌলিক মনোভাব খুবই ইতিবাচক রয়ে গেছে… বৈশ্বিক ঋণ, শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। এ ছাড়া চলমান কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ক্রয় কার্যক্রমও এ বছর সোনার দামের উত্থানকে ত্বরান্বিত করেছে।’
রয়টার্সের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, সোনা কোনো সুদ না দিলে সাধারণত নিম্ন সুদের সময় ভালো করে থাকে দামি এই ধাতু। এখন ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিসেম্বরে নীতি সুদহার কমানোর সম্ভাবনা ৮৫ শতাংশ, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫০ শতাংশ।
বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়লে দেশেও তার প্রভাব পড়ে। বর্তমানে দেশে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম কমে ২ লাখ ৮ হাজার ১৬৭ টাকা। গত অক্টোবরে সোনার দর ২ লাখ ১৭ হাজার টাকায় উঠেছিল, যা দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ দর।
গাজীপুরে মেশিন বিস্ফোরণে ২ শ্রমিক দগ্ধ
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে কারখানায় মেশিন বিস্ফোরণে দুই শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন। শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বোর্ডমিল এলাকায় মদিনা গ্রুপ নামে একটি প্লাস্টিক তৈরির কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
দগ্ধরা হলেন—মাটিকাটা এলাকার মো. বাবুল হোসেন (১৮) ও পূর্ব চান্দরা এলাকার মো. রবিউল ইসলাম (২৩)। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
কারখানার শ্রমিকরা জানান, উপজেলার বোর্ড মিল এলাকায় মদিনা পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কারখানায় শ্রমিকরা প্লাস্টিকের পানির ট্যাঙ্ক তৈরির কাজ করছিলেন। সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ মেশিন অতিরিক্ত গরম হওয়ায় বিস্ফোরণ হয়। এতে মুহূর্তেই আগুন ধরে যায়। এ সময় আশপাশের অন্য শ্রমিকরা দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। আগুনে দুই শ্রমিক দগ্ধ হন। পরে তাদের দ্রুত উদ্ধার করে সফিপুর এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, পানির ট্যাংক তৈরির একটি মেশিন অতিরিক্ত গরম হয়ে বিস্ফোরণ হয়। এতে আগুন ধরে গেলে আমাদের দুইজন শ্রমিক দগ্ধ হন। দগ্ধ শ্রমিকদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মেশিনের আগুন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আসার আগেই কারখানার শ্রমিকরা নিয়ন্ত্রণ করায় আগুন ছড়াতে পারেনি।
কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের ফাইটার মনির হোসেন বলেন, জরুরি সেবায় কল করে খবর দেওয়া হয়। তবে ফায়ার সার্ভিস আসার আগেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে দুইজন শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন।
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা / জিপিএ হালনাগাদে নতুন নির্দেশনা দিল স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর
২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের এইচএসসি পরীক্ষার জিপিএ হালনাগাদ শেষ হয়েছে। ভর্তিচ্ছুদের হালনাগাদের তথ্য অনলাইন আবেদন কপি ডাউনলোডের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। একই সাথে অনলাইন আবেদনে জিপিএর সঠিক তথ্য না পাওয়া গেলে তিন দিনের মধ্যে যোগাযোগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর ২০২৫) স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষার শিক্ষাবোর্ডসমূহের পুনঃনীরিক্ষাকৃত ফল অনুসারে টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড কর্তৃক ২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস এবং বিডিএস ভর্তি পরীক্ষার আবেদনকারীদের পরীক্ষার জিপিএ ইতোমধ্যে হালনাগাদ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীদের টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের অনলাইন পোর্টাল http://dgme.teletalk.com.bd লগইন করার পর Applicant's Copy তে ক্লিক করে নিজ নিজ ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে হালনাগাদকৃত অনলাইন আবেদনের কপি অবশ্যই ডাউনলোডপূর্বক প্রিন্ট করে সংরক্ষণ করতে হবে।
অনলাইন আবেদনে জিপিএ সংক্রান্ত সঠিক তথ্য না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের চিকিৎসা শিক্ষা শাখায় প্রমাণসহ যোগাযোগের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উল্লিখিত সময়সীমার পর কোনো আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না।
গত ২১ নভেম্বর ২০২৫ অনলাইন আবেদন শেষ হয়েছে। প্রায় এক লাখ ২২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেছেন। এবার ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন রয়েছে ৫ হাজার ১০০টি। সরকারি ডেন্টাল কলেজ ও মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটে আসন সংখ্যা ৫৪৫টি।আগামী ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ একযোগে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের পোস্টাল ভোট নিয়ে যুক্তরাজ্যে ব্রিফিং
লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশন যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জন্য পোস্টাল ভোট সম্পর্কে একটি ব্রিফিং সেশনের আয়োজন করেছে।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) ব্রিটিশ-বাংলাদেশি এবং কমিউনিটির প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানটিতে সশরীরে এবং অনলাইনে অংশগ্রহণ করেন।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিদেশ থেকেই ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ করে দেওয়ার ঐতিহাসিক উদ্যোগ নেওয়ায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন কমিউনিটি প্রতিনিধিরা।
হাই কমিশনার কমিউনিটি নেতাদের, গণমাধ্যম ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে পোস্টাল ভোট সম্পর্কে প্রচারণা চালাতে সহায়তা করতে এবং অ্যাপে ভোটার নিবন্ধনে উৎসাহিত করতে আহ্বান জানান।
তিনি প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জন্য পোস্টাল ভোট ব্যবস্থা সফলভাবে বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
অংশগ্রহণকারীরা পোস্টাল ভোট নিয়ে নানা প্রশ্ন করেন এবং সেটি আরও উন্নত করার বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন।
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা এখন ২৭ নভেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত পোস্টাল ভোটের জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন।
পুরুষ বন্ধ্যত্ব কেন হয়, এর সমাধান কী?
পুরুষের বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা বা গতি কমে গেলে, কিংবা কখনো বীর্যে কোনো শুক্রাণুই শনাক্ত না হলে এবং স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে নিয়মিত সহবাস করার পরও এক বছরের মধ্যে গর্ভধারণ না হলে ওই অবস্থাকে পুরুষ বন্ধ্যত্ব বা মেল ইনফার্টিলিটি বলা হয়। সব বন্ধ্যত্ব-দম্পতির ক্ষেত্রে ৩০-৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে পুরুষজনিত কারণই দায়ী।
কারণ
● অতিরিক্ত ধূমপান করা।
● অ্যালকোহল, নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করা।
● কম সক্রিয় জীবনযাপন।
● ওজনাধিক্য।
● অতিরিক্ত স্ট্রেস।
● হরমোনজনিত সমস্যা (টেস্টোস্টেরন, থাইরয়েড, প্রোলাকটিন)।
● জিনগত কারণ।
● সংক্রমণ যেমন ক্ল্যামাইডিয়া, গনোরিয়া ইত্যাদি।
● শুক্রনালির ব্লকেজ।
● অণ্ডকোষের টিউমার, ভেরিকোসিলি, মামস অরকাইটিস।
● দীর্ঘ সময় গরম আবহাওয়ায় কাজ করা।
কীভাবে শনাক্ত করা হয়
বীর্য পরীক্ষার মাধ্যমে পুরুষ বন্ধ্যত্ব শনাক্ত করা সম্ভব। এর নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। তিন দিন সহবাস বন্ধ রেখে বীর্য পরীক্ষা করতে হবে। একটি বীর্য পরীক্ষার রিপোর্ট যদি খারাপ আসে তাহলে এক মাস পরে আরেকটি বীর্য পরীক্ষা করতে হবে। সেটিও যদি খারাপ আসে তাহলে অণ্ডকোষের আলট্রাসনোগ্রাফি ও হরমোন পরীক্ষা করতে হবে।
যা করতে হবে
ওজন কমানো, প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটাচলা করা, সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া, তৈলাক্ত ও চর্বিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা। স্ট্রেস কমানো এবং রাতে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা। ধূমপান, মদ্যপান পরিহার করা।
শুক্রাণুর সংখ্যা ও গতির উন্নতির জন্য কিছু মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট দেওয়া হয়। যেমন লেবোকারনিটিন, ভিটামিন সি, ই, ডি, বি কমপ্লেক্স, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। তিন মাস পর্যবেক্ষণের পর যদি শুক্রাণুর সংখ্যার উন্নতি না হয়, তাহলে ইন্ট্রাইউটেরাইন ইনসেমিনেশন বা আইভিএফ/ইকসি করা যেতে পারে।
ভেরিকোসিলি (অণ্ডকোষের শিরা ফুলে যাওয়া) বা শুক্রনালি বন্ধ। এ-জাতীয় সমস্যা থাকলে অনেক ক্ষেত্রে সার্জারি লাগতে পারে। হরমোনজনিত সমস্যা থাকলে এর চিকিৎসা করতে হবে।
যদি শুক্রাণুর সংখ্যা বা গতির মাঝারি ধরনের সমস্যা থাকে, তবে সাধারণত আইইউআই এবং যদি শুক্রাণুর সংখ্যা বা গতির অনেক বেশি সমস্যা থাকে তবে ইকসি করা হয়।
কিছু ক্ষেত্রে বীর্যে কোনো শুক্রাণুই পাওয়া যায় না, যাকে অ্যাজোস্পারমিয়া বলা হয়, সে ক্ষেত্রে অণ্ডকোষ থেকে শুক্রাণু নিয়ে ইকসি করা হয়।
ডা. অবন্তি ঘোষ, গাইনি, প্রসূতি ও বন্ধ্যত্ব রোগবিশেষজ্ঞ, আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর-১০, ঢাকা
হুমকি ও হয়রানির অভিযোগে শুটিং ফেডারেশনের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুলশানে জিডি
বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্টস ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জি এম হায়দার সাজ্জাদের বিরুদ্ধে তিন নারী শুটার হুমকি ও যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে গুলশান থানায় জিডি করেছেন। এক নারী শুটারের করা এই জিডিতে কোচ শারমিন আক্তারের বিরুদ্ধেও অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ রয়েছে।
চাঁদের জন্মকথায় নতুন থেইয়া-তত্ত্ব: বৈজ্ঞানিকভাবে কতটা টিকে থাকতে পারে?
ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, মঙ্গল আকৃতির গ্রহাণু থেইয়ার সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষ থেকেই চাঁদের উৎপত্তি। পৃথিবী ও চাঁদের খনিজ ও আইসোটোপিক গঠন বিশ্লেষণে তাঁরা থেইয়ার অস্তিত্বের নতুন ব্যাখ্যা সামনে এনেছেন।



















