বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

আওয়ামী লীগের সাধারণ ভোটারদের ভোট দিতে বিধি-নিষেধ নেই

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৩৫ এএম
আওয়ামী লীগের সাধারণ ভোটারদের ভোট দিতে বিধি-নিষেধ নেই
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ১৯৯১ সালে দলটি ক্ষমতায় গেলে হয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রী। আগামী সংসদ নির্বাচন, বর্তমান রাজনীতি, অন্য দলের সঙ্গে জোট গঠন এবং দলের মনোনয়ন না পাওয়াদের ক্ষোভ নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শিহাবুল ইসলাম।

প্রশ্ন : জুলাই সনদ, এনসিপির স্বাক্ষর না করা, জামায়াতের আন্দোলন, শেখ হাসিনার মামলার রায়—সবকিছু মিলিয়ে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আপনি কী ভাবছেন?

উত্তর : সব মিলিয়ে দেশের রাজনৈতিক যে অবস্থা বা নির্বাচন, এটি আশা ও আশঙ্কার মাঝামাঝি।

আশাও আছে আবার আশঙ্কাও আছে। সরকার যদি সিদ্ধান্তে অটল থাকে তাহলে নির্বাচন সম্ভব। আর সরকারকে নিরপেক্ষভাবে সহায়তা করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। নির্বাচনের বিধি, আরপিও আছে নির্বাচন কমিশনের। সেটি তাদের অনুসরণ করতে হবে। আর যাঁরা ভোটার আছেন তাঁদের মধ্যে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহটা সৃষ্টি করতে হবে। ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে যে উদ্যমটা তৈরি হয়েছিল, সংস্কার নিয়ে সাত মাস বৈঠক করতে করতে মনে হয়েছে, তাদের সেই উদ্যমে ভাটা পড়েছে। তাদের মধ্যে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে, নির্বাচন হবে তো? এই প্রশ্নটা দূর করতে যাঁরা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাঁদের কাজ করতে হবে। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে। যদি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া যায় তবে আশঙ্কা কেটে যাবে।

প্রশ্ন : আসন্ন নির্বাচনে কোনো ধরনের মেকানিজম হওয়ার আশঙ্কা করছেন কি?

উত্তর : অন্তত ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ভোটারকে যদি ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত করা যায়, তাহলে ভোট গ্রহণের দায়িত্বে যাঁরা থাকবেন তাঁরা ইচ্ছা করলেও আর নয়ছয় করতে পারবেন না। কারণ তখন ভোটাররা সুষ্ঠু ভোট হতে বাধ্য করবেন। এ ক্ষেত্রে আর মেকানিজম করার সুযোগ থাকবে না।

আর যদি মেকানিজম হয় তাহলে অতীত সরকার যা করেছে তা-ই হবে। তাহলে আগের নির্বাচন কমিশনার আর এই নির্বাচন কমিশনের মধ্যে চারিত্রিক কোনো তফাৎ মানুষ খুঁজে পাবে না। প্রশ্ন : প্রশাসনে রদবদলে নিরপেক্ষতার বিষয়ে আপনারা সরকারকে চিঠি দিয়েছিলেন। আসন্ন নির্বাচন পরিচালনা ও ফলাফল ঘোষণায় যাঁরা থাকবেন সঠিকভাবে ফলাফল ঘোষণার ক্ষেত্রে তাঁদের ভিন্ন কোনো আচরণ দেখা যেতে পারে কি?

উত্তর : ভোট দেবে ভোটার। রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার ভোট দেবেন না। ধরে নিলাম আসন্ন নির্বাচনের দায়িত্বে সব জামায়াত, আওয়ামী লীগ। কিন্তু তাঁরা তো ভোট গ্রহণ করবেন। হাজার হাজার ভোট তো বন্ধ করতে পারবেন না। এখানে ভোটাররাই ভোটের নিরাপত্তা দেবেন। ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত ভোটাররাই কেন্দ্রের সবচেয়ে বড় পাহারাদার।

প্রশ্ন : দীর্ঘ সময় পর একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা করছে দেশের মানুষ। এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ কি গণতান্ত্রিক ধারায় প্রবেশ করতে পারবে?

উত্তর : গণতান্ত্রিক পথে প্রবেশের, রাস্তায় ওঠার একটাই পথ—অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আমরা যদি তা করতে ব্যর্থ হই তাহলে পারব না। গণতন্ত্রের পথে প্রবেশের একটাই পথ—সেটা হলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।

প্রশ্ন : আসন্ন নির্বাচনে দেশের বড় একটি দল অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তাদের অনুপস্থিতিতে সাধারণ মানুষের কাছে কী ধরনের বার্তা যাবে?

উত্তর : বার্তাটা এখন আর নতুন করে দেওয়ার কিছু নেই। ৫ আগস্টের পরেই বার্তাটা চলে গেছে। ভোট দিতে তো কারো বাধা নেই। আমরা তো সবার ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্যই আন্দোলন করছি। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগের যাঁরা ভোট দিতে অভ্যস্ত, তাঁরা কেন্দ্রে যাবেন না এটা তো শতভাগ গ্যারান্টি দেওয়া যাবে না। স্থানীয় ইকুয়েশনে তাঁরা কারো না কারো পক্ষে ভোট দিতে যাবেন। এখানে আওয়ামী লীগের সাধারণ ভোটারদের ভোট দিতে তো বিধি-নিষেধ নেই।

প্রশ্ন : গাইবান্ধা, রংপুর অঞ্চলে তিস্তা বাঁচাও কর্মসূচি, পদ্মা বাঁচাও কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। এর মাধ্যমে বিএনপি আসলে কী অর্জন করতে চাচ্ছে? এটা কি ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলবে?

উত্তর : জনগণের দুর্দশা লাঘবে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল মাঠে থাকবে, এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই। এটা দায়িত্ব। এটাকে জনগণ কিভাবে নেবে, সেটা জনগণের দায়িত্ব। কিন্তু সভা-সমাবেশ করলেই সবাই ভোট দিয়ে দেবে, এ জন্য তো করা হচ্ছে না। এটা জনগণের প্রতি দায়িত্বের জায়গা থেকে করা। সবকিছুকে ভোটে জড়ানো ঠিক নয়।

প্রশ্ন : সাত-আট মাস ধরে জামায়াত আপনাদের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় কথা বলছে। এর বিপরীতে বিএনপির পক্ষ থেকে শান্তভাবে উত্তর দেওয়া হচ্ছে। এর কারণটা কী?

উত্তর : এর কারণ একটাই, দুর্বলরা চিৎকার করে বেশি। আর সবলরা কথা কম বলে।

প্রশ্ন : নির্বাচনে জোট নিয়ে আলাপ হচ্ছে। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট হচ্ছে না, এটা নিশ্চিত। এনসিপির সঙ্গে বিএনপির জোট হওয়া নিয়ে একটা আলোচনা হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। এর সত্যতা কতটুকু?

উত্তর : সংবাদমাধ্যমে অনেক খবরই আছে। এ ব্যাপারে আমি কোনো বক্তব্য দেব না। এনসিপিকে জিজ্ঞেস করলে তারাও একই কথা বলবে। যেই জিনিসটায় আড়াল আছে, ওই জিনিসটা আড়ালেই থাকুক। যখন আলোতে আসবে, তুমিও জানবে আমিও জানব।

প্রশ্ন : বেশ কিছু আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের পরিবর্তন করার দাবি জানানো হচ্ছে। কিছু জায়গায় বিক্ষোভ হচ্ছে, রিভিউ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কি ঘোষিত কোনো প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে?

উত্তর : যাঁরা মনোনয়ন পাননি তাঁরা যে অযোগ্য, এমন তো নয়। দেখা যায় সমান-সমান, কেউ কারো চেয়ে কম নন। তার পরও তো একজনকে বেছে নিতে হয়। আর যাঁরা দল করেন তাঁদেরও ভাবতে হবে দলীয় স্বার্থ, তারপর গণতন্ত্রের স্বার্থ, তারপর দেশের স্বার্থ।

প্রশ্ন : এই ক্ষোভ নিরসনের উপায় কী?

উত্তর : এটা বেশিক্ষণ থাকবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত নমিনেশন চূড়ান্ত না হবে নির্বাচন কমিশনে, ওই পর্যন্তই টুকিটাকি এসব বিবাদ-প্রতিবাদ থাকবে।

প্রশ্ন : এ ক্ষেত্রে রিভিউ গ্রহণের সুযোগ আছে কি?

উত্তর : রিভিউ হতেও পারে। কিন্তু হতেই হবে এমন নয়। আমাদের কাছে তথ্য আছে কোথায় কোথায় বিক্ষোভ হচ্ছে। এটা আমরা খতিয়ে দেখব সঠিক না বেঠিক। রিভিউ হবে কি না, এটা যেমন আমি বলতে পারব না, আবার হবে না, সেটাও বলতে পারব না। দুইটাই হতে পারে।

সূত্র : কালের কণ্ঠ

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • দিনের সেরা
  • সপ্তাহের সেরা